সৌদি আরবের এক বৃদ্ধাশ্রম
সৌদি আরবের তায়েফ শহরের এক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম সেদিন। এ দেশেও বৃদ্ধ বাবা মাকে আশ্রমে পাঠিয়ে দেয় কোনো কোনো সন্তান, আমার তা জানা ছিলো না।তায়েফে আমার কর্মস্থলের সহকারী পরিচালক আমাকে দায়িত্বটা দিলেন, বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে ‘বৃদ্ধদের দাঁতের যত্ন’ বিষয়ে একটি বক্তব্য দিতে হবে। সে উদ্দেশেই সেদিন বৃদ্ধাশ্রমে গমন। বক্তব্যটা ছিলো ইংরেজীতে, তবে দোভাষীর কাজটা করেছিলেন একজন ফিলিস্তিনী সহকর্মী। বক্তব্য শেষে বৃদ্ধদের দেয়া হলো উপহারের প্যাকেট। এরপর বৃদ্ধদের মুখগহবরের রোগ নির্ণয়ের পর্ব।
বক্তব্য শুনতে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকেই বসে ছিলেন ব্যাটারীচালিত হুইলচেয়ারে। বার্ধক্যের কারণে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন প্রায় সকলেই। কেউ কেউ ভুগছেন স্মৃতিবৈকল্যে। ‘তবিব আস্নান’ অর্থাৎ ডেন্টিস্ট এসেছেন জানতে পেরে এগিয়ে এলেন একজন বৃদ্ধ, আমার বাবার মতোই বৃদ্ধ তিনি, শিশুর মতো আবদার জানালেন, ‘দোক্তর, আনা আবগা তারকিবা’, অর্থাৎ, ডাক্তার, আমি বাঁধাই করা দাঁত চাই।
বৃদ্ধাশ্রমে আমাদের এ সেবামূলক কাজ চললো দুদিন ধরে। আমাদের এ উদ্যোগের প্রশংসা করলেন সবাই। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন-লাইন বুলেটিনে আমাদের এ সেবামূলক কাজের খবর ছাপা হলো, ছাপা হলো আমাদের ছবি।
বৃদ্ধদের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছিলাম বলে, নিজেকে আনন্দিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু এ আনন্দের গভীরে কোথায় যেন শুনতে পেয়েছিলাম বেদনার সূর। বৃদ্ধদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার শুধু নিজের বাবার কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল। প্রবাসে আছি বলে, অনেক দিন বাবাকে দেখিনা। এ বার্ধ্যকে তোমার পাশে এসে দাঁড়াতে তে পারিনি বলে ক্ষমা কর বাবা। কিন্তু, সৌদি আরবের এ বৃদ্ধাশ্রমে আমার বাবার মতই যারা বসবাস করছেন, তাদের সন্তানদের জন্য আমার বড় সহানুভূতি হয়, কী করে নিজ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার সুযোগ দিল এরা? নিজ পিতাকে নিঃসঙ্গ রেখে এরা কি বড় বেশি সুখে আছে?
সিকদার নাজমুল হক
তায়েফ, সৌদি আরব।