স্তব্ধ গ্যালারি, স্বাগতিক রাশিয়ার বিদায়

চমক দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেও শেষ রক্ষা হল না রাশিয়ার৷ টাইব্রেকারে ৩-৪ গোলে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশকে৷
১৯৫৮ থেকে ১৯৭০৷ টানা চার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া কখনই উঠতে পারেনি কোয়ার্টার ফাইনালে৷
এবার স্বাগতিক দেশ হিসেবে গ্যালারি ভর্তি দর্শককে হতাশ করেননি রুশ ফুটবলাররা৷ রীতিমতো চমক দেখিয়ে ৪৮ বছর পর উঠে আসে শেষ আটের লড়াইয়ে৷
কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়েও শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল রাশিয়া৷ বলের দখলে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও ৩১ মিনিটে জিউবার ক্রস থেকে ডেনিস চেরিশেভের দারুণ এক হেডে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা৷
বলের দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্রোয়েশিয়া৷ ৩৫ মিনিটে ডেইয়ান লোভরেন এবং ৩৮ মিনিটে ইভান স্ট্রিনিচ দেখেন হলুদ কার্ড৷ ৩৯ মিনিটেই ক্রোয়েশিয়াকে খেলায় ফেরান আন্দেই ক্রামারিচ৷ মান্দজুকিচের ক্রসে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান তিনি৷
প্রথমার্ধের বাকি সময় এবং দ্বিতীয়ার্ধেও বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে দু’দলই৷ কিন্তু সেই সুযোগগুলোকে আর গোলে রুপান্তর করতে পারেননি কেউই৷
খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে৷
গ্যালারির দর্শকদের কাঁদিয়ে ১০০ মিনিটে গোল করে বসেন ডোমাগই ভিডা৷ কর্নার থেকে লুকা মদ্রিচের বাড়িয়ে দেয়া শটে ডিফেন্সের ভুলে ২-১ গোল এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া৷
গ্যালারি তখন নিস্তব্ধ৷ একের পর এক আক্রমণে গিয়েও সমতা ফেরাতে পারছিল না রাশিয়া৷ একসময় কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেসভ স্বয়ং ডাগ আউটে এসে দর্শকদের আবেদন জানান চিৎকার দিয়ে খেলোয়াড়দের সমর্থন দিতে৷
১১৫ মিনিটে অবশেষে খাদের কিনারা থেকে রাশিয়াকে টেনে তুলেন মারিও ফার্নান্দেজ৷ ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভুত এই রুশ খেলোয়াড় জাগোয়েভের ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ এক হেডে বোকা বানান সবাইকে৷ বারের কোণা দিয়ে জালে গড়ানো এই হেড আটকানোর কোন সাধ্যই ছিল না ক্রোয়াট কিপারের৷
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে নিতে আবার খেলায় ফিরে আসে স্বাগতিক রাশিয়া৷
খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে৷
এবার লড়াই রুশ কিপার আকিনফেভ এবং ক্রোয়াট কিপার সুবাসিচের মধ্যে৷
শেষ ষোলর লড়াইয়ে ডেনমার্কের সাথে টাইব্রেকারে জয়ের পরকোয়ার্টার ফাইনালে আবার টাইব্রেকার৷ ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপারকে দেখে অনেকটাই নির্ভার মনে হচ্ছিলো৷ অন্যদিকে দর্শকের চাপ সামলাতেই হিমশিম আকিনফেভ৷
প্রথম শটেই ভুল করে বসেন ফিয়োদর স্মোলভ৷ নিজের ডানদিকে ঝাঁপ দিলেন সুবাসিচ৷ স্মোলভের শটও গেল সেদিকেই৷ মাটিতে পড়তে পড়তেই বাঁ হাতের ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন বল৷
ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে প্রথম শট নিতে এসে ভুল করেননি মার্সেলো ব্রোজোভিচ৷ স্কোর হয় রাশিয়া ০-১ ক্রোয়েশিয়া৷
রাশিয়ার দ্বিতীয় শট সুন্দরভাবে জালে জড়ান আলান জাগোয়েভ৷ রাশিয়া ১-১ ক্রোয়েশিয়া৷
রাশিয়াকে খেলায় ফেরান কিপার আকিনফেভ৷ ক্রোয়েশিয়ার মাতেও কোভাচিচের শট আটকে দেন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে৷ দুই শট শেষে স্কোর রাশিয়া ১-১ ক্রোয়েশিয়া৷
কিন্তু আকিনফেভের দেয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি রাশিয়া৷ অতিরিক্ত সময়েযে মারিও ফার্নান্দেজ খেলায় ফিরিয়েছিলেন রাশিয়াকে, তাঁর পায়েই শেষ হয়ে যায় রাশিয়ার স্বপ্ন৷ তৃতীয় শট বারের বেশ বাইরে দিয়ে চলে যায়৷ কিপারকে বল আটকানোর কোন চেষ্টাই করতে হয়নি৷
লুকা মদ্রিচের শট মিস হয়নি অল্পের জন্য৷ বারে লেগে ঢুকে যায় রাশিয়ার জালে৷
এর পরের দুই শটে রাশিয়ার সের্গেই ইগনাশেভিচ ও ডালের কুজিয়ায়েভ এবং ক্রোয়েশিয়ার ডোমাগই ভিডা ও ইভান রাকিটিচের শট ঠিকঠাক খুঁযে নেয় প্রতিপক্ষের জাল৷
কিন্তু এক গোলে পিছিয়ে থাকায় ৩-৪ গোলে টাইব্রেকার জিতে সেমিফাইনালে চলে যায় ক্রোয়েশিয়া৷ শেষ হয় স্বাগতিক রাশিয়ার জয়যাত্রা৷
১০ জুলাই প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম৷ পরেরদিন ক্রোয়েশিয়াকে খেলতে হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷

দুই হেডেই সুইডেনের বিদায়
ইংল্যান্ডের কাছে ২-০ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো সুইডেন৷ মাঠে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে ফাইনালে ওঠার পথে আরো এক সহজ ধাপ পার করলো থ্রি লায়ন্স৷
মুখোমুখি পরিসংখ্যানে দু’দলই প্রায় সমানে সমান৷ ২৪ বারের দেখায় ৮ জয় থ্রি লায়ন্সের, অন্যদিকে ৭ জয় সুইডেনের৷ বাকি ৯ খেলাতেই পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে দু’দলকে৷
কিন্তু শনিবারের ম্যাচে গ্রুপ পর্বের দুর্দান্ত সুইডেনের দেখা মিললো না৷ বল দখলে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড৷ গোলে শটও সুইডেনের দ্বিগুণ৷
খেলার শুরুতে অবশ্য ম্যাচের পাল্লা কারো দিকেই ভারি ছিল না৷ ম্যাচের ৩০ মিনিটে এক কর্নার থেকে ইয়ং-এর ভাসিয়ে দেয়া বলে নিখুঁতভাবে মাথা ছোঁয়ান হ্যারি ম্যাগুয়্যার৷ সুইডিশ ডিফেন্ডার এবং গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে বল চলে যায় জালে৷ এটিই ম্যাগুয়্যারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল৷
প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি আক্রমণে গেলেও সমতায় ফিরতে পারেনি সুইডেন৷ বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচেই প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকে জয় আদায় করতে পারেনি সুইডেন৷ ১১টি এমন ম্যাচের দুইটি ড্র করতে পারলেও হারতে হয়েছে বাকি ৯টিতেই৷
এই রেকর্ডে পরিবর্তন আনতে পারলো না সুইডেন৷ বরং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৫৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করলো ইংল্যান্ড৷ আবারো হেড৷ এবারের নায়ক ডেলে আলি৷ মার্কারকে কাটিয়ে সামনে এসে লিংগার্ডের উড়িয়ে দেয়া বলে ঠিক গোলপোস্টের কোণা থেকে গোল করেন আলি৷
এরপর বল দখলে মরিয়া হলেও সুইডেনের ভাগ্যের শিঁকে ছেঁড়েনি৷ হার্ড ট্যাকলের দায়ে ৮৭ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখতে হয় জন গুইডেটিকে, ৯৪ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন সেবাস্টিয়ান লারসন৷
২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো ইংল্যান্ড৷ এ নিয়ে কেবল তৃতীয়বার সেমিফাইনাল খেলছে থ্রি লায়ন্স৷
এর আগে ১৯৬৬ সালে এবং ১৯৯০ সালে সেমিফাইনালে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করে তাঁরা৷ এর মধ্যে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন জুলে রিমে ট্রফিই ইংল্যান্ডের জয় করা একমাত্র বিশ্বকাপ৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.