হুমায়ুন ফরিদী

আমরা  স্মরণ করছি আমাদের নাট্য জগতের এক কিংবদন্তির কথা, তিনি হলেন আমাদের সেই প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। এক কিংবদন্তির মহানয়ক।২০১২ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি শতকোটি ভক্তকে বেদনার সাগরে ডুবিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন হুমায়ূন ফরিদী। প্রিয় অভিনেতাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি আমরা। জীবনভর শুধু অভিনয়ই করে গেছেন। নিজেই বলতেন ‘অভিনয় ছাড়া আর কিছুই পারি না আমি’। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অন্যরকম, ভীষণ কৌতুকপ্রিয় মানুষ ছিলেন। নাটকের সেটে নাকি সদা সবাইকে কৌতুকে মাতিয়ে রাখতেন। এত কৌতুক মনে রাখেন কীভাবে, প্রশ্নের উত্তরে একবার বলেছিলেন, জীবনটাই তো কৌতুক, আমরা কেউ থাকব না, থাকবে শুধু কৌতুক। নিজের জীবনের সাথে কৌতুক করতে করতে অস্তাচলে যাওয়া হুমায়ূন ফরিদীর অভাব কখনোই পূরণ হবার না। জানা যায়, অভিনয় জীবনের মতই ইত্যাকার জীবনাচারেও ফরিদী ছিলেন সাবলীল-স্বতঃস্ফূর্ত।

তিন দশকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে। যেখানেই গিয়েছেন সাফল্যের বরপুত্র হয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই যোগ করেছেন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা। অভিনয়ের মাধ্যমে সব সময় ছড়িয়েছেন বাঁচার আলো, জীবনের আলো। সাদামাটা জীবনযাপনের চলাচলেই পথ হেঁটেছেন জীবনভর। অথচ মনে-প্রাণে ছিলেন দারুণ রঙে রঙিন এক উজ্জ্বল মানুষ। তিনি হুমায়ুন ফরীদি। অসাধারণ অভিনেতা। মঞ্চে, ক্যামেরার সামনে এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও যার দাপুটে সাবলীলতা মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করতো যে কাউকে। এ মানুষটি একন আর আমাদের মাঝে নেই।
২০১২ সালের আজকের দিনে পৃথিবীর সব মায়া পেছনে ফেলে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯শে মে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ঢাকার নারিন্দায়। তার অভিনয় জীবনের শুরু ছাত্রজীবনে, মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে।
হুমায়ুন ফরীদি টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘ভবের হাট’ ও ‘শৃঙ্খল’। প্রথম মঞ্চনাটক কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে ১৯৬৪ সালে। প্রথম মঞ্চনাটক নির্দেশনা দেন স্কুল জীবনে ‘ভূত’। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। টিভি নাটক অথবা মঞ্চে সেলিম আল দীন এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জুটির বাইরে হুমায়ুন ফরীদির সর্বাধিক সংখ্যক এবং সর্বাধিক সফল কাজ ছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। আর ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকে তার অভিনীত চরিত্র কানকাটা রমজানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।
প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছে ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। ‘সন্ত্রাস’ ছবির মাধ্যমে খলনায়ক চরিত্র শুরু হয় তার। তিনি ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে। নিয়মিত টিভি অভিনয়ের পাশাপাশি হুমায়ুন ফরীদি তেমন একটা লিখতেন না। তবে কিছু টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটক নির্মাণ করেছেন।
দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক এ মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। নাম দেবযানি। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সবার প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করে পর্দায় আবিষ্ট করে রেখেছিলেন কোটি কোটি দর্শককে।

হুমায়ুন ফরিদী001

Humayun Faridi

হুমায়ুন ফরীদি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হুমায়ূন ফরীদি
জন্ম মে ২৯, ১৯৫২
নারিন্দা, ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যু ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৫৯ বছর)
ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তা বাংলাদেশী
বংশোদ্ভূত বাঙালি
নাগরিকত্ব বাংলাদেশী
পেশা অভিনেতা
কার্যকাল ১৯৮১ – ২০১২
প্রভাবিত হয়েছেন সেলিম আল দীন
দম্পতি সুবর্ণা মোস্তফা-সহ ২ জন
সন্তান দেবযানী (মেয়ে)
পুরস্কার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
হুমায়ুন ফরীদি (জন্ম: ২৯ মে ১৯৫২ – মৃত্যু: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২) একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন।

পরিচ্ছেদসমূহ 
১ জন্ম ও শিক্ষাজীবন
২ কর্মজীবন
৩ মঞ্চ ও টিভি
৩.১ মঞ্চ
৩.২ টিভি
৪ চলচ্চিত্র জীবন
৪.১ অভিনীত চলচ্চিত্র ও চরিত্রসমূহ
৫ ব্যক্তিগত জীবন
৬ পুরস্কার ও স্বীকৃতি
৭ মৃত্যুবরণ
৮ তথ্যসূত্র
৯ বহিঃসংযোগ
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
হুমায়ুন ফরীদি ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে পড়াশোনা করেন।[১] এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনান্তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

কর্মজীবন
১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলতঃ এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন।[২]

এরপর তিনি গণমাধ্যমে অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মঞ্চ ও টিভি
অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। যে সব নাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি লাভ করেন তন্মধ্যেঃ

মঞ্চ নাটক
কিত্তনখোলা
মুন্তাসির ফ্যান্টাসি
কিরামত মঙ্গল(১৯৯০)
ধূর্ত উই
টিভি[সম্পাদনা]
নিখোঁজ সংবাদ
হঠাৎ একদিন
পাথর সময়
সংশপ্তক
সমূদ্রে গাংচিল
কাছের মানুষ
মোহনা
নীল নকশাল সন্ধানে (১৯৮২)
দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২)
ভাঙ্গনের শব্দ শুনি (১৯৮৩)
কোথাও কেউ নেই
সাত আসমানের সিঁড়ি
সেতু কাহিনী (১৯৯০)
ভবের হাট (২০০৭)
শৃঙ্খল (২০১০)
জহুরা
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
প্রতিধ্বনি
গুপ্তধন
সেই চোখ
অক্টোপাস
বকুলপুর কত দূর
মানিক চোর
“আমাদের নুরুল হুদা” ৬০ তম পর্ব থেকে।
চলচ্চিত্র জীবন
অভিনীত চলচ্চিত্র ও চরিত্রসমূহ
সন্ত্রাস
দহন
লড়াকু
দিনমজুর
বীর পুরুষ
বিশ্ব প্রেমিক
আজকের হিটলার
দুর্জয়
শাসন
আঞ্জুমান
আনন্দ অশ্রু
মায়ের অধিকার
আসামী বধু
একাত্তরের যীশু – মুক্তিযোদ্ধা
প্রাণের চেয়ে প্রিয় – বিল্লাত আলী
ভালোবাসি তোমাকে
কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি
প্রবেশ নিষেধ
ভণ্ড
“ঘাতক”
টাকার অহংকার
অধিকার চাই
মিথ্যার মৃত্যু
বিদ্রোহী চারিদিকে
মনে পড়ে তোমাকে
মাতৃত্ব: The Motherhood
টাকা: The Ultimate Magic – আরমান চৌধুরী
ব্যাচেলর
জয়যাত্রা
শ্যামল ছায়া – মুক্তিযোদ্ধা
দূরত্ব
চেহারা
আহা! – কিসলু
কি যাদু করিলা – কামাল চেয়ারম্যান
মেহেরজান – খন্দকার
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০’র দশকে। ‘দেবযানী’ নামের তাঁর এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে।[২] পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও তাঁদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি
২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন হুমায়ুন ফরীদি।
নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন।  ২০১৮ সালের মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন তিনি। অভিনয় অঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হলো। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
মৃত্যুবরণ
তিনি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.