হাইড্রোজেন বোমার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দানব বিমান’

ওয়াশিংটন: উত্তর কোরিয়ার গত সপ্তাহের পরমাণু পরীক্ষার জবাব দিতে এবং শক্তি প্রদর্শনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় বি-৫২ নামের একটি দানবাকৃতির জঙ্গিবিমান মোতায়েন করেছে। গত সপ্তাহের উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষায় ক্ষিপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ প্রায় সব দেশ। তবে পিয়ইয়ং সেটিকে হাইড্রোজেন বোমা বলে দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গুয়ামে মোতায়েন করা হয়েছে বি-৫২ বিমান। এটি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের এফ-সিক্সটিন এবং কোরিয়ার এফ-ফিফটিন জঙ্গিবিমানের প্রহরায় বিমানটি ওসান বিমান ঘাঁটির উপরে নিচু দিয়ে উড্ডয়ন শেষে আবার গুয়ামে ফিরে আসে বলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ওসান ঘাঁটিটি সিউলের দক্ষিণে এবং উত্তর কোরিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক উসকানিমূলক পদক্ষেপের জবাবে বি-৫২ মোতায়েন করা হয়েছে। ‘বি-৫২ মিশন মোতায়েন আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের সাক্ষর এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তায় জোটের বহু সক্ষমতার একটি নিদর্শন,’ বলা হয় মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে। এতে আরো বলা হয়, কোরীয় উপদ্বীপের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া অঙ্গীকারাবদ্ধ। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন বুধবার দাবি করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাব দিতে তার দেশ হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। কিমের বক্তব্যের জবাবেই যুক্তরাষ্ট্র বি-৫২ বিমান মোতায়েন করেছে। এর আগে ২০১৩ সালে উত্তর কোরিয়া তৃতীয়বার পরমাণু পরীক্ষা চালালে যুক্তরাষ্ট্র এই বিমান মোতায়েন করেছিল। সর্বশেষ মোতায়েন নিয়ে পিয়ইয়ংয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। আসুন জেনে নেয়া যাক বি-৫২ বিমানের কিছু চমকপ্রদ তথ্য: যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘপাল্লার বি-৫২ বিমানটি শীতলযুদ্ধের সময় পরমাণু হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। উত্তর ভিয়েতনামে বোমা হামলায়ও এটি ব্যবহার করা হয়। ১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্ধে ৪০ ভাগ হামলা হয় এই বিমানটি দিয়ে। এটি আকাশেই জ্বালানি নিতে সক্ষম। ক্রজ ক্ষেপণান্ত্রের পাশাপাশি বোমা হামলায়ও এটি ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে গিয়ে এটি হামলায় সক্ষম। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় এটি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার বার্কসডেল সামরিক ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে ইরাকে হামলা শেষে ৩৫ ঘণ্টার উড্ডয়নের পর আবার নিজ ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে। ১৯৯৯ সালে যুগোস্লাভিয়ায় বিমান হামলা এবং ২০০১ ও ২০০২ সালে আফগানিস্তানে আল-কায়েদা ও তালেবানের ওপর হামলায় এটি অংশ নেয়। প্রথম মোতায়েন: ১৯৫৫ সালে দৈর্ঘ্য: ১৫৯ ফুট ৪ ইঞ্চি পাখার দৈর্ঘ্য: ১৮৫ ফুট গতি: ঘণ্টায় ১০৪৫.৮৫ কিলোমিটার পাল্লা: ১৪,১৫৯ কিলোমিটার (একবার জ্বালানি নিয়েই) সমরাস্ত্র বহন ক্ষমতা: ৭০,০০০ পাউন্ড (৩১,৫০০ কেজি) ক্রুর সংখ্যা: ৫ জন মোট বিমান: ৫৮টি সক্রিয়, ১৮টি রিজার্ভ দাম: ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার (৬৭০ কোটি টাকা) সূত্র: আলজাজিরা, এপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.