হায়রে আমার প্রিয় বুড়িগঙ্গা !

শেখ মোঃ তানভীর : “জোছনা রাতে বুড়িগঙ্গা তুলতো যখন ঢেউ/আমার পিঠে পরীর ডানা পরিয়ে দিতো কেউ’”_ কবি আল-মাহমুদের ‘মানুষ’ কবিতায় বুড়িগঙ্গা নিয়ে এমন বর্ণনা এখন শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। এই নদী ঘিরেই ঢাকার গোড়াপত্তন হলেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় বুড়িগঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। হয়তো মৃত সরীসৃপের মতো কোনো একদিন পড়ে থাকবে রাজধানীর হৃৎপিণ্ড বুড়িগঙ্গা। ‘বুড়িগঙ্গা বাঁচাও’ হৃদয়বিদারক আর্তনাদ করেও হয়তো লাভ হবে না বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দখলবাজিদের দখলে ও দূষণে বুড়িগঙ্গা দিনের পর দিন কালের গর্ভে হারিয়ে’ যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছর ধরে বুড়িগঙ্গা তিলে তিলে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর জায়গা দখল করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গড়ে উঠছিলো স্থাপনা।পরে সেই স্থাপনার কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হলেও এখন আবার পূর্নরায় গড়ে উঠছে স্থাপনা। কমছে নদীর প্রশস্ততা, কমছে প্রাণপ্রবাহ। প্রতি মুহূর্তে নদীর মধ্যে ফেলা হচ্ছে পানিদূষণকারী ভয়ংকর সব বর্জ্য। বুড়িগঙ্গার বড় অংশেই নেই জলজ প্রাণী বা মাছ। এ নদীর পানি বহু আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে পরেছে। এমনকি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পানির দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়া যায় না। পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, সরকার যদি বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় তাহলে নদীটি আবার প্রাণ ফিরে পাবে বলে।

দখলে ছোট হচ্ছে বুড়িগঙ্গা : সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বুড়িগঙ্গা দখলের নানা চিত্র। নদীর দক্ষিণ পারের আটি, খোলামোড়া থেকে শুরু করে জিনজিরা, কালীগঞ্জ হয়ে পারগেণ্ডারিয়া, হাসনাবাদ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার বুড়িগঙ্গা দখল করে ৩ শতাধিকের বেশি পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সদরঘাটের উল্টো দিকে চৌধুরীনগরে রিফাত টাওয়ার, রফিক টাওয়ার, আহসানউল্লাহ মার্কেট ও আগানগরের আলম মার্কেটের রাস্তার ঠিক ওল্টো পাশে আছে অনেক অবৈধ দোকান পাট স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা ফেরিঘাটসংলগ্ন বটতলা এলাকায় বেশ কিছু টং দোকান স্থাপন করা আছে। বাবুবাজার ব্রিজের নিচের অংশের পুরোটাই দখলদারের কবলে চলে গেছে।burigonga

পানি না, বিষ! : বুড়িগঙ্গার নদীর পানির দূষণ সম্পর্কে কেরানীগঞ্জের থানাঘাটের খেয়ামাঝি নুরুমিয়া (৫২) বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা অহন পুরাই কেমিকেল আর ময়লার বাগাড়! এইটা আর নদী নাই! ছোটো বেলা থেইকা এই নদীর পারে বাসকরি এই নদীতে নৌকা বাইছি, মাছ ধরছি। শত শত জাওল্যা (জেলে) বাঁইচ্যা আছিল নদীর মাছ ধরার জিবিকা নির্বাহ করে। তহন পানি ছিল টলটইল্যা পরিষ্কার। পরে ট্যানারিওয়ালারা কেমিকেল ফালাইতে ফালাইতে পুরা নদীই বিষাক্ত বানাইছে আবার অনেক দোকান ,বাসাবাড়ির ময়লায় মাছ তো দূরের কথা, এই নদীতে অহন কোনো পোকামাকড়ও নাই।

পানির দুর্গন্ধে মানুষজন নদীর ধারেকাছেও ভিড়ে না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি চাপের মুখে বহু দেন-দরবারের পর ট্যানারি মালিকরা ২০১৫ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে অধিকাংশ বড় কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তরে উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে রাজস্ব আয়ের একটি বড় শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা ছিল প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪ কিলোমিটার দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গার আয়তন ১৮ কিলোমিটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.