হূদির হূদ্যতা
রুবেল পারভেজ |
ফোন করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে— লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন। কণ্ঠ শুনেই বোঝা গেল, অভিনেত্রী, নির্মাতা হূদি হকের ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে। তার পরও হাসিমুখে বললেন, ‘একটু ব্যস্ত আছি। তবে কথা বলা যাবে।’ নিজেই জানালেন, এ মুহূর্তে ‘শেষ বিকেলের গান’ নামের একটি সিরিয়ালের শুটিং চলছে। এনটিভিতে প্রচারিত নাটকটি এরই মধ্যে ২৬ পর্ব অতিক্রম করেছে। পরবর্তী পর্বগুলো প্রস্তুত রাখতেই এখন শুটিং চলছে। আর নাটকটির গল্প যেহেতু হূদি নিজেই লিখছেন, সেহেতু তার সব চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন শেষ বিকেলের গানই বিরাজ করছে। এর বাইরে ১ ঘণ্টার নাটক নির্মাণ তো আছেই।
একসময়ের টিভি পর্দার অন্যতম এ মুখ বর্তমানে নাটক নির্মাণেই ব্যস্ত। অভিনয়ে সময় দিচ্ছেন না বললেই চলে। যদিও মঞ্চে যথেষ্ট সরব এ অভিনেত্রী। নিজের নির্দেশিত ‘গওহর বাদশা ও বানেছা পরী’ ছাড়াও নাগরিক নাট্যাঙ্গন প্রযোজিত আরো দুটি নাটকে তিনি নিয়মিতই মঞ্চে উঠছেন। এর মধ্যে গওহর বাদশা ও বানেছা পরীর কথা আলাদা করে না বললেই নয়। দলের ২০তম প্রযোজিত এ নাটকের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো নির্দেশক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
মঞ্চে ‘প্রথমবার’ নির্দেশক হিসেবে কাজ করলেও তার এ উপস্থাপনে কোনো দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলো, প্রপস, কস্টিউম আর কোরিওগ্রাফির নিখুঁত উপস্থাপন শুরুতেই ভিন্ন এক হূদিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সবার সামনে। মৈমনসিংহ গীতিকার লোকগাথা অবলম্বনে নির্মিত নাটকটি নিয়ে তখন বেশির ভাগ সমালোচকই বেশ ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত না হয় স্বাভাবিকই ধরে নেয়া গেল। কিন্তু এ নাটকেই হূদি বানেছা পরীর চরিত্রে অভিনয় করলেন, যা তাকে অন্য রকম এক সম্মানজনক আসনে বসিয়েছে।
একদিকে মঞ্চ নির্দেশনা, টিভি সিরিয়াল, নাটক নির্মাণ, অন্যদিকে নিজের দুই সন্তান আর পরিবার। সবকিছু মেলান কীভাবে হূদি? এমন প্রশ্নে অনেকের কাছ থেকে ক্লান্তি আর বিষণ্নতার আর্তনাদ শোনা গেলেও হূদিকে কিন্তু যথেষ্ট প্রাণোচ্ছলই মনে হলো। বললেন, ‘দুটোর প্রতিই দায়িত্ব রয়েছে। একটির চেয়ে অন্যটি কখনই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এ বিষয়টি মাথায় রাখি। ফলে দুটোতেই সমান আন্তরিকতার ছাপ রাখি।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে কথা বলার শুরুতেই হূদি একটি পুরনো তথ্য নতুন করে জানিয়ে চমকে দিলেন। তিনি জানান, ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস তার জীবনে নাকি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। ২০০০ সালের এই দিনে বিটিভিতে প্রচারিত বেগম রোকেয়ার লেখা গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই তিনি টিভি পর্দায় প্রথমবারের মতো পা রেখেছিলেন। এবার হূদির কাছে নারী দিবস নিয়েই জানতে চাওয়া হয়। ‘নারীদের নিয়ে বিশেষ একটি দিন উদযাপন হোক, এটা কখনই চাই না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে দিবসটির প্রয়োজনীয়তা এখনো কমে যায়নি। কারণ এখনো এ দেশের নারী নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবিরত লড়াই করছেন। আবার একজন নারী নির্দেশক পরিচয়ে আমাকে কেউ ডাকুক, এটাও আমি শুনতে চাই না’— বলেন হূদি। অন্যদিকে কোনো লেখায়, নাটকে, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে এবং নারীকে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও আদর্শ ও পরিমিতিবোধ মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সোজা কথায় বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে কারোরই উচিত হবে না, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেয়া। মনে রাখতে হবে নারীসত্তার যে পরিচিতি আমরা ধারণ করি, সেটারও একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে, গৌরব আছে।’
বণিক বার্তা।