‘হোক আলিঙ্গন’, কলকাতা মেট্রো স্টেশনেই অভিনব প্রতিবাদ

আনন্দবাজার পত্রিকা।
কলকাতা মেট্রোয় নীতি পুলিশের দাপাদাপির বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদে সামিল এ শহরের মানুষ। সেই সঙ্গে মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও জানালেন, তাঁরাও নীতি পুলিশির বিরুদ্ধে রয়েছেন। ফেসবুকে মেট্রো রেলের পেজ-এ তাঁরা লিখেছেন, “একটা কথা স্পষ্ট করে জানানো ভাল, মেট্রো রেলওয়ে নীতি পুলিশির বিপক্ষে।”

বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে জমায়েত হয় অসংখ্য তরুণ-তরুণীর। পোস্টার-প্ল্যাকার্ড-স্লোগানে তাঁরা আওয়াজ তোলেন, ‘হোক আলিঙ্গন’। আলিঙ্গন যে আদৌ অশ্লীলতা নয়, অনৈতিক নয়, অপরাধ নয়, সেটা যে দুটো মানুষের ভালবাসার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, সেই বার্তাই দেন ওই প্রতিবাদীরা।

কেউ ছাত্রছাত্রী, কেউ চাকুরিজীবী, কেউ বা অভিনেতা। এ দিনের প্রতিবাদে সামিল হন বিভিন্ন পেশার মানুষ। দুপুরের চড়া রোদ এড়িয়ে প্রতিবাদীদের কণ্ঠ সরব হতে থাকে বার বার। প্রতিবাদে সামিল এক তরুণী বলেন, “বন্ধুত্বের মধ্যে লিঙ্গভেদ দেখা হয় না, সেই সঙ্কীর্ণতা কাটিয়ে উঠুক আমাদের চারপাশের মানুষ। কেননা, এই শহর এ ধরনের সঙ্কীর্ণতা দেখতে অভ্যস্ত নয়। এবং এই শহর এ সঙ্কীর্ণতাকে ঠাঁই দেবে না— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা ভিড়ের মধ্যে থেকে তখন ফের আওয়াজ ওঠে, ‘হোক আলিঙ্গন’। এর পর মেট্রো স্টেশনের সামনেই পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন প্রতিবাদীরা। তাঁদের একাংশ মেট্রোর কামরাতেও ওঠেন আলিঙ্গনরত অবস্থায়। এ ভাবেই রূপ নেয় এক অভিনব বিক্ষোভ। মেট্রো-কাণ্ডের বিরুদ্ধে এ দিন প্রতিবাদে সামিল হবে এসএফআই-ও। নীতি পুলিশির প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ দমদম মেট্রো স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাবেন এসএফআই কর্মী-সমর্থকেরা।

এ দিন অবশ্য চার পাশে কোথাও নীতি পুলিশদের দেখা মেলেনি। সোমবার রাতে এই নীতি পুলিশদের হাতে গণপ্রহার জুটেছিল শহরের এক যুগলের। মেট্রোর কামরায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার ‘অপরাধে’ প্রথমে কটূক্তি করা হয়। এর পর দমদম মেট্রো স্টেশনে নামামাত্রই তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এক দল সহযাত্রী। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন প্রৌঢ়। কিল-চড়-লাথি-ঘুষি, কোনও কিছুই বাদ পড়েনি— সবই এসে পড়তে থাকে ওই যুগলের উপর।
এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গোটা ঘটনায় প্রথমে নিশ্চুপ থাকার পর অবশেষে মঙ্গলবার মুখ খোলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষও। যাত্রীদের প্রতি ফেসবুকে তাঁদের প্রতিক্রিয়া, “দমদম মেট্রো স্টেশনে গত কাল যে ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত করা হবে। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। যদিও এই ঘটনা তলিয়ে দেখা হবে। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে জানানো ভাল, মেট্রো রেলওয়ে নীতি পুলিশির বিপক্ষে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.