হোম অফিস শুনতে যতটা আনন্দের, আসলেই কি তাই?

‘আমি বাসা থেকে ভাল কাজ করতে পারি,’ হোম অফিসের শুরুতে এরকম মন্তব্য অনেকেই করেন৷ কারণ অফিসে যেতে না হলে সকালে বেশিক্ষণ ঘুমানো যায়, দুইবেলা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময় বাঁচে৷

বাড়িতে বসে কাজ করার বড় সুবিধা এগুলো৷ তবে সমস্যাও কিন্তু কম নয়!

হোম অফিস হলে সকালে অফিসের জন্য আলাদাভাবে তৈরি হওয়ার ঝামেলা নেই, যেমন খুশি পোশাকেই থাকা যায়! বসের কোনো নিযন্ত্রণ নেই, বিরক্তিকর সহকর্মী নেই, কত আরাম! বাড়িতে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করা যায়৷

জার্মানির গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হ্যাবেক গত তিন সপ্তাহ ধরে ঘরে বসে কাজ করছেন৷ তিনি বিভিন্ন টেলিফোন কনফারেন্সের পাশাপাশি লন্ড্রিও করেন৷

হোম অফিস করার সময় প্রিয়জনদের ফোন করতে পারেন, বাসা পরিস্কার করতে পারেন, আপনার খাবার বা অর্ডার দেয়া দরকারী প্যাকেট নিজেই রিসিভ করতে পারেন, যা কিনা এই মুহূর্তে বেশ উপকারী৷

বাড়িতে অফিসের কাজ করার জন্য খুব বেশি জিনিসেরও প্রয়োজন নেই৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি টেলিফোন এবং একটি কম্পিউটার হলেই যথেষ্ট৷ করোনা সংকটে শিক্ষকরা বাসা থেকে ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করছেন৷ ফিটনেস প্রশিক্ষকরা বাড়ি থেকেই ভিডিওতে অনুশীলন দেখিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবেই তা ফলো করতে পারছে ৷ এমনকি বার্লিনে ভিডিওর মাধ্যমে ব্যালে ড্যান্স পর্যন্তও শেখানো হচ্ছে৷

হোম অফিসের বেশকিছু অসুবিধাও রয়েছে কিন্তু৷ বাসায় আপনি যা ইচ্ছে তাই খেতে পারছেন ফলে ওজন বাড়ছে যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই সুখকর নয়!

এদিকে বাইরে ঝলমলে সুন্দর রোদ সেখানে লোভনীয় ব্যালকনি বা বাগান রেখে ঘরের ভেতরে বসে অফিস করা বেশ কঠিন ৷ আরেকদিকে পাশের বাসায় নানা কাজ চলছে, দেয়ালে ড্রিল মেশিনের বিকট শব্দে অফিসের কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে৷ তাছাড়া বাসার থাকার ফলে যেমন নিজের বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে পারছেন, আবার ওদের নিয়ে ঝামেলাও সইতে হচ্ছে৷ আর পোষা কুকুর থাকলে তো ঝামেলা আরো বেশি৷ তবে যাদের পরিবার বা কুকুর কিছুই নেই তারা হোম অফিসের কারণে নিঃসঙ্গ বোধ করেন৷ বাসার বাইরে বের না হওয়ায় অনেকে ‘‘বোর” ফিল করছেন ফলে শরীর – মন দুটোই খারাপ করছে৷

আজকাল কিছু হোটেল হোম অফিসের বিকল্প হিসেবে তাদের কিছু রুম ছেড়ে দিচ্ছে, যারা নিরিবিলিতে আরাম করে অফিসের কাজ করতে চায়, তাদের জন্য৷ কফি মেশিনসহ এরকম একটি বিকল্প অফিসরুমের জন্য হোটেল মালিককে দিতে হবে দিনে ৫০ ইউরো৷ যা বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে দিনের আট ঘন্ট এক ধরণের ছুটি কাটানোর মতো মনে হতে পারে৷

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক রুথ স্টক-হমবুর্গ করোনা সংকটে মানসিক ফিটনেস নিয়ে একটি গবেষণার কাজ করছেন৷ তিনি প্রটেস্টান্ট প্রেস সার্ভিসকে বলেন, ‘‘ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল হচ্ছে ‘বোর আউট’৷ বা সংকটকালীন সময়ে অফিসে শেখার সুযোগ কমে যাওয়া, হতাশা, উদ্বেগের মতো কারণগুলো মানুষের কার্ডিওভাসকুলার এবং ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে পারে৷”

সূত্র: ডয়চে ভেলে।