হোয়াইট হাউজে কেমন আছেন বাংলাদেশি রুমানা

তিনি নিজেকে ‘হিজাবি’ বলতে পছন্দ করেন। নান্দনিক এই হিজাব পরেই তিনি হোয়াইট হাউজে কাজ করছেন।
রুমানা আহমেদ নামের এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান তরুণী হিজাব পরেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপেদষ্টা বেন রোডসের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।
হোয়াইট হাউজে কর্মরত ছয় মুসলিম নারীকে নিয়ে বিশেষ সিরিজ প্রচার করছে সৌদি আরবের টিভি স্টেশন আল-আরাবিয়া ইংলিশ। তাদেরই একজন রুমানা।
এই ছয়জনের কেউ হয়তো হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর ও গোপনীয় তথ্য নিয়ে কাজ করছেন। অন্যরা আছেন আইনসভা, অভিবাসন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে।
রুমানার এ তথ্য এমন সময় সামনে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বিস্তারিত না জেনে কোনো মুসলিমকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক হবে না। তবে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান নেতারাও ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন।
এ নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন প্রেসিডেন্ট ওবামা গত মাসে বাল্টিমোরে একটি মসজিদ পরিদর্শন করতে যান। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম কোনো মসজিদ পরিদর্শন।
ওবামা এ সময় মুসলিমদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ওবামা বলেন, অনেক মুসলিম জীবন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করছেন।
আল আরাবিয়া ইংলিশ যে ছয় মুসলিম আমেরিকানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, লেবানন, মিশর ও সোমালিয়া বংশোদ্ভূত।
দেশ ও প্রেসিডেন্টকে সেবা করতে পেরে তারা গর্বিত বোধ করছেন।
রুমানা আহমেদ খুবই তারুণ্যদীপ্ত। রোডসের অধীনে যেসব মুসলিম কাজ করেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র তিনি।
বর্তমান পদের আগে তিনি ওবামার সহকারী ভ্যালেরি জারেটের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন।
ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথমে সরকারি চাকুরির প্রতি তার অনীহা ছিল।
কিন্তু ২০০৮ সালে ওবামা যখন পরিবর্তন আর আশার বাণী শোনালেন তখনই মনোভাব বদলে যায় রুমানার। তার ভাষণে তিনি অনুপ্রাণিত হন এবং সরকারি চাকরিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।
হোয়াইট হাউজে কাজ করার সুযোগ পেয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে তার যোগাযোগ আরো বেড়েছে।
‘এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। কারণ আমি ইফতারে এবং গত বছর প্রেসিডেন্টের গোলটেবিলে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে পরেছি,’ বলছিলেন রুমানা।
বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রুমানা বলেন, ‘সর্বশেষ নাইন ইলেভেনের পর সেটা ঘটেছিল। আমি তখন সবে সরকারি স্কুলে হিজাব পরতে শুরু করেছি। ৯/১১ এর পরে লোকজন আমাকে হয়রানি করতে শুরু করে। তবে সত্যি বলতে কী আমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি।’
তবে হোয়াইট হাউজে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে বিপরীতধর্মী।
‘হিজাবি হওয়ার কারণে আমি আরো বেশি ক্ষমতাবান বলে মনে করছি। কারণ লোকজন আমার কাছে এসে আমার দৃষ্টিভংগী, দৃষ্টিভংগীর পেছনের মূল্যবোধ জানতে চান। কারণ আমি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভংগী নিয়ে এসেছি।’
তবে তিনি স্বীকার করেন যে ওয়েস্ট উইংয়ে কাজ করার সময় তিনি যথেষ্ট আত্ম-সচেতন থাকেন।
‘প্রথমত আমার নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমি এই ভবনে আছি। লোকজন আমাকে দেখে কী ভাবে তা নিয়ে আমি (প্রথমে) কিছুটা বেশিই সচেতন ছিলাম।’
‘তবে লোকজন এতোটাই চমৎকার যে তারা অন্যদের প্রতি যেভাবে তাকায় আমার দিকেও সেভাবেই তাকায়। আমার বস বেন রোডস আমাকে প্রেসিডেন্টের সামনে বহুবার হাজির হওয়ার দারুণ সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি যখনই সেখানে যাই, আমার বিস্ময় লাগে যে আমি তো হিজাব পরে দাঁড়িয়ে আছি।’
রোল মডেল
হিজাব পরার উপকারিতা অনেক মন্তব্য করেন তিনি বলেন, অভিনেতা অ্যাডাম স্কটের সঙ্গে তিনি হিজাব পরেই বৈঠক করেছেন।
‘তিনি আমার কাছে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, এখানে অভিজ্ঞতা, আমার চুল ঢাকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে তোমার মত করে বড় করে তুলতে চাই।’
রুমানা বলেন, হোয়াইট হাউজে তার অবস্থান ওবামা প্রশাসনের বৈচিত্রের প্রতি সমর্থনের প্রতীক, যার মধ্যে মুসলিমরাও রয়েছেন।
তিনি একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, একটি সরকারি সফরে তিনি মরক্কো গেলে সেখানে ফিলিস্তিনি তরুণ অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাসই করতে চাননি যে তার মত হিজাবি নারীকে হোয়াইট হাউজ নিয়োগ দিতে পারে।
বেন রোডস আল-আরাবিয়াকে বলেন যে রুমানা ‘আমেরিকান মহান সফলতার এক কাহিনী যিনি তার ধর্মবিশ্বাস এবং আমাদের দেশের উজ্জ্বল প্রতিনিধি। আমি প্রতিদিন তার ওপর নির্ভর করি। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ, এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য এমনকি কিউবার সাথে সম্পর্কোন্নয়নসহ প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করেন।’
রুমানা ‘ তার দেশ (আমেরিকা) এবং তার ধর্মবিশ্বাসকে খুবই মূল্য দেয় এবং একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন যে এ দুটোর মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং একটি আরেকটির পরিপূরক। উপরন্তু তিনি অন্যদের জন্য, বিশেষ করে তরুণ মুসলিমদের জন্য দৃষ্টান্ত, যারা আমেরিকায় তাদের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত,’ বলেন রোডস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.