২০১৫ – টেলিযোগাযোগ খাতের উত্থান-পতনের বছর
বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতে গত দেড় দশকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সংশ্লিষ্ট খাতে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে নিয়মিত। বৈচিত্র্য ও উত্থান-পতনের মাঝেও ২০১৫ সালকে টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বছর বৈশ্বিক মোবাইল সাবস্ক্রাইবার বা সেলফোন সংযোগ সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছে। এ সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে টেলিযোগাযোগ খাত। যদিও সংশ্লিষ্ট খাতে অপ্রত্যাশিত ঘটনা যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। গত বছর প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠানকে টেলিযোগাযোগ ব্যবসা বেচে দিতে দেখা গেছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একীভূত হয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রবণতা দেখা গেছে। অবশ্য ২০১৬ সালে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। খবর পিটিআই।
গত বছর দ্বিতীয়ার্ধ শেষে টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেলিজিওগ্রাফি এক প্রতিবেদনে জানায়, বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতের প্রসার ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। নেটওয়ার্ক সেবার প্রসার এবং মোবাইল ডিভাইসের সহজলভ্যতার সুবাদে এখন সবার হাতের মুঠোয় পৌঁছেছে টেলিযোগাযোগ সেবা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে বিশ্বব্যাপী মোবাইল সংযোগ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১০ কোটিতে। এর মধ্যে ৩৭০ কোটি সংযোগ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। বিপুলসংখ্যক গ্রাহক নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পরিণত হয়েছে।
বিপুল জনসংখ্যার কারণে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার বাজার বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাগ্য নির্ধারণে এ দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় বাজার চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় তিন টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের জন্য গত বছর খুব বেশি ভালো যায়নি। আয়ের সঙ্গে শীর্ষ নির্বাহীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত প্রক্রিয়া পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে।
অন্যদিকে প্রযুক্তি খাতের দ্বিতীয় বড় বাজার ভারত। গত বছর দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা সম্প্রসারণে সাধ্যমতো দক্ষতা প্রদর্শন করেছে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফলও এসেছে ভালোই। যদিও বছরের শেষটা তাদের জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তার ছিল। এ সময় দেশটির টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেলফোন সেবার মানোন্নয়নে কঠোর অবস্থান নেয়। কল ড্রপের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জরিমানা দেয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে, যা এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের দাবি, কল ড্রপের ক্ষেত্রে জরিমানার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নে অবকাঠামোগত ব্যয় বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। আয় কমার সঙ্গে ব্যয় বাড়ার এ পরিস্থিতি তাদের জন্য খুশির কারণ হবে না।
টেলিজিওগ্রাফির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ভারত ও চীনেই রয়েছে ২৩০ কোটি মোবাইল সংযোগ। ভারতের ৯০ শতাংশ সেলফোন ব্যবহারকারী এখনো টুজি নেটওয়ার্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশটির এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্কে আপগ্রেডের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
অন্যদিকে চীন ২০১৫ সালে ফোরজি বা এলটিই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান বাজারে পরিণত হয়। বর্তমানে দেশটির ১৬ কোটি ২০ লাখের বেশি মোবাইল সংযোগ ব্যবহারকারী এলটিই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।
গত বছর টেলিযোগাযোগ সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সংশ্লিষ্ট খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তরঙ্গ সক্ষমতাও বাড়াতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর যে টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব খারাপ গেছে তা কিন্তু নয়। শুধু যোগাযোগ রক্ষায় মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার নয়; বরং এখন সব সেবাই মোবাইল ডিভাইসকেন্দ্রিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেলফোনের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন ও পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সেবা আগামী বছর বড় পরিসরে কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক আরো বাড়বে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়াতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে।