৫ জানুয়ারি ঘিরে উত্তেজনা – আ’লীগ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
জাকির হোসেন লিটন ও শফিকুল ইসলাম : ৫ জানুযারি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারবিরোধী বিএনপি। ক্ষমতাসীনেরা দিবসটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস এবং বিরোধীরা ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করতে এ কর্মসূচি দিয়েছে। ফলে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি ইতোমধ্যেই ওই দিন কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ শনিবার ডিএমপির কাছে আনুষ্ঠানিক অনুমতির আবেদনও করে তারা। এ ছাড়া সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বিএনপির তরফ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারিকে এবারো ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করবেন। ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। এ ছাড়া সারা দেশের জেলা কার্যালয়ে আলোচনাসভা করবে দলটি।
অন্য দিকে আওয়ামী লীগও দিবসটিতে একইস্থানে জনসভা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে আনন্দর্যালি ও শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে ক্ষমতাসীনরা। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ১৮টি স্পটে একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ আজ সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, দিবসটি উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচি আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আমরা আগেই ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া গণতন্ত্রের বিজয় উপলক্ষে ওই দিন সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনাসভা, র্যালি ও শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচি সফল করতে আজ রোববার বিকেলে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে যৌথসভাও রয়েছে।
বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে ৫ জানুয়ারি কোনো একটা কর্মসূচির নাম করে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ওই দিন তথাকথিত কর্মসূচির নামে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে জনগণ আবারো দলটিকে সমুচিত জবাব দেবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিরোধীজোট ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। এরপর বিএনপি ওই নির্বাচনের দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত বছর ৫ জানুয়ারির দিনটিকে ঘিরে রাজধানীতে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। সরকার ওই দিন বিএনপিকে জনসভার অনুমতি না দেয়ায় দলটি টানা অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। প্রায় তিন মাসের টানা অবরোধকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দিবসটিকে কেন্দ্র করে এবারো কর্মসূচি ঘোষণা করল দলটি।
গতকাল এক যৌথসভা শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের দিনকে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। এই দিবসটিকে স্মরণ করতে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা আগামী ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি শান্তিপূর্ণ জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই দিন জেলা কার্যালয়ে হবে আলোচনা সভা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভার ব্যাপারে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। আমরা আশা করছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহার করার জন্য অনুমতি পাবো। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা সফল করে দেশে গণতন্ত্র নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে দেয়ার জন্য অবদান রাখবেন।
এ দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি চাইতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার পর চার সদস্যের ওই প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে পৌঁছায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ, সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করিম শাহীন।
জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি সমাবেশের ব্যাপারে ডিএমপি এখনো অনুমতি দেয়নি।
অন্য দিকে একই দিনে সারা দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা দিবসটিকে জমকালোভাবে পালন করতে চায়। সরকার ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিপুল বিজয়ের একই দিনে দুই দলের কর্মসূচি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।