জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের লাভ-ক্ষতি
জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসের লাভ–ক্ষতি
কিউ আর ইসলাম
বিশ্ববাজারে ২০১২ সালে জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধি পায়। তবে পরবর্তী বছর সরবরাহ কমে গিয়ে ২০১৪ সালে আবার বৃদ্ধি পায়। ওপেকের মাসিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ বছর প্রতিদিন ৯ কোটি ২৬ লাখ ব্যারেল চাহিদার বিপরীতে ৯ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেলের উপরে জ্বালানি তেলের সরবরাহ থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা থেকে উৎপাদন বেশি হবে। যদিওবা আমেরিকার উৎপাদন প্রতিদিন ৯৬ লাখ থেকে কমে ৯৩ লাখ ব্যারেলের নিচে চলে এসেছে। ওপেক স্বয়ং প্রতিদিন সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩ কোটি ব্যারেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে তাদের দেশগুলোয় ২১ লাখ ব্যারেল বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের জুলাইয়ে ওপেক ৩ কোটি ২৮ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করে রেকর্ড সৃষ্টি করে। বর্তমানে তেল উৎপাদনকারী প্রতিটি দেশ বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি করে চলেছে। সৌদি আরব ওপেকের গরিষ্ঠ সদস্য এবং একমাত্র তেল উৎপাদনকারী দেশ, যে সত্যিকারভাবে উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। অন্যান্য দেশ কমিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। সৌদি আরবের সাম্প্রতিক সমস্যা হলো, দেশে প্রতি মাসে ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ঘাটতি থাকছে এবং গত আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অর্থঋণ গ্রহণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গত আগস্টে এ দেশ ২ হাজার কোটি রিয়েল (৫৩০ কোটি ডলার) সমমূল্যের বন্ড ছেড়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বিজনেস ও মার্কেটস-সংক্রান্ত খবর, উপাত্ত ও বিশ্লেষণ প্রদানকারী ব্লুমবার্গ বিজনেসের মতে, আমেরিকায় নতুন শেল তেলকূপগুলোয় হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচারিং ব্যবহারের ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ড্রিলিং ও নির্মাণে সহায়তা প্রাপ্তি— এ দুয়ের সমন্বয় এই ভরা বাজারে তেলের প্লাবন অব্যাহত রাখতে তেল উৎপাদনকারীদের জন্য সহায়ক হবে। জুন ২০১৪ থেকে জানুয়ারি ২০১৫— এ সময়ের মধ্যে তেলের দাম ৬০ শতাংশ পড়ে গেলেও বাজারে সরবরাহ কমেনি। এরই মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে দাম বাড়লে লাভের আশায় কোটি কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সুপারট্যাংকারগুলোয় মজুদ করতে শুরু করে। এ বছর বিশ্বে তেল উৎপাদনের পরিমাণ মোট মজুদের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মার্চ থেকে তেলের চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় প্রতিদিন ১৫ লাখ ব্যারেল কম থাকছে। বিশ্বব্যাপী মজুদের ক্ষমতা কমে গেছে। অপরিশোধিত তেল পুরনো লবণ খনি, ট্যাংক বা ট্যাংকারে রাখা হচ্ছে। আমেরিকায় এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপাত্তের ভিত্তিতে ওই দেশে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ মজুদের ক্ষমতার প্রায় ৭০ শতাংশ এবং ১৯৩৫ সালের পরে সর্বোচ্চ পৌঁছেছে। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে, বিশ্বে জ্বালানি তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ কমছে না।
জ্বালানি তেলের দাম ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এ দামবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করতে বিভিন্ন দেশে উঠতি চাহিদা বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল, বিশেষ করে চীন ও ভারতে। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ২০০৮ সালের জুলাইয়ে ১৪৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ওই বছর ডিসেম্বরের শেষে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম লক্ষণীয় হারে কমে ৪০ মার্কিন ডলারের নিচে চলে আসে। ডব্লিউটিআই (ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট) অপরিশোধিত তেলের স্পট মূল্য ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ব্যারেলপ্রতি ৩০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পড়ে যায়। সংবাদ প্রতিবেদনে জ্বালানি তেলের দাম সাধারণত ব্রেন্ট ক্রুডের পাশাপাশি ডব্লিউটিআইয়ের দরের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয়। ডব্লিউটিআইকে টেক্সাস লাইট সুইটও বলা হয়ে থাকে। হালকা, নিম্ন ঘনত্বের ও কম গন্ধক ধারণকৃত এ গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিশ্ববাজারে দর নির্ধারণে বেঞ্চমার্ক বা পরিমাপক হিসেবে ধরা হয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০০৯ সালে ব্যারেলপ্রতি ৮২ মার্কিন ডলারে চলে আসে। এ বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ মার্কিন ডলারে পড়ে যায়। বিশেষ করে মিসরে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টির ফলে। পরবর্তী প্রায় তিন বছর তেলের দাম ৯০ থেকে ১২০ মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। আমেরিকায় তেল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এবং কিছু দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি এসে তেলের দাম আবার পড়ে যেতে শুরু করে। এ বছরের শুরুতে ৫০ মার্কিন ডলারের নিচে এসে আবার উপরে উঠলেও আগস্টে ৪০ মার্কিন ডলারের নিচে চলে আসে। আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম গোল্ডম্যান তেলের দাম গড়পড়তা ৫০ মার্কিন ডলারের নিচে থাকবে এবং শিগগির এর দাম হয়তো আগের মতো বাড়বে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এদিকে ব্লুমবার্গ বিজনেসের মতে, আমেরিকায় অনেক অদক্ষ ও কম উৎপাদনকারী কূপ বন্ধ হয়ে গেলেও শেল তেলকূপগুলো উৎপাদন বৃদ্ধি করতে থাকবে। কারণ বর্তমান বাজারে ব্যারেলপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার দরে তেল বিক্রি করেও তাদের মুনাফা থাকবে।
জ্বালানি তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় প্রভাব থাকতে পারে। যেমন— ১৯৮৫-৮৬ সালে দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ভূমিকা ছিল বলে বিবেচনা করা হয়। জ্বালানি তেলের দাম কমে গেলে আমদানিকারক দেশ যেমন— জাপান, চীন বা ভারত লাভবান হয়। কিন্তু জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অর্থনৈতিক সমস্যার শিকার হয়। জ্বালানি তেলের দাম ৮৪ থেকে ৪০ মার্কিন ডলারে কমে গেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষণের ফলাফল ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেছে। এতে দেখা যায়, ভারত, আমেরিকা ও চীনে জিডিপি বৃদ্ধি পায় শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ শতাংশ হারে। অন্যদিকে সৌদি আরব ও রাশিয়ায় জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে যায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ মার্কিন ডলারে স্থিতিশীল হলে বিশ্ব জিডিপিতে শূন্য দশমিক ৫ হারে যোগ হতে পারে।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ২০১২-১৩ অর্থবছরে তেল ভর্তুকি বাবদ ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা চেয়েছিল। সরকার নয় মাসের মধ্যে তিন দফায় কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধি করে দেশে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বৃদ্ধির চাপ শিথিল করার উদ্যোগ নেয় সে সময়। ডিজেলের দাম ৫০ শতাংশের ওপর এবং পেট্রলের দাম ২০ শতাংশের কাছাকাছি বৃদ্ধি পায়। সেসঙ্গে সরকার ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিও প্রদান করে। তেলের দাম ২০১১-১২ অর্থবছরে ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলারের উপরে উঠে পরবর্তী তিন বছর ৯০ মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ বা অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় যে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকার সর্বসাকল্যে ১৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার উপরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে ভর্তুকি বাবদ প্রদান করে। উল্লেখ্য, দেশের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন প্রতি বছর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করে থাকে। অভ্যন্তরীণ দাম আন্তর্জাতিক বাজারদর থেকে কম থাকায় দেশে আমদানিকৃত পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লোকসানে থাকে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে করপোরেশনকে সহায়তা করে। এদিকে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমে গেলেও পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। বেড়েছে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ভর্তুকি বাবদ অর্থ প্রদান।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ডিসেম্বর ২০১৩-এর তুলনায় ডিসেম্বর ২০১৪ সময়ে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন-২০০৯ সালের ১৫ (৪) ধারার বিধানমতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয় গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তেলের দামের এ নিম্নমুখী প্রবণতার প্রভাবে উক্ত অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক অবস্থান থাকবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। জ্বালানি তেলের দাম পরবর্তীতে আরো কমেছে। এতে ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে হয়তো আরো স্বস্তি এসেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এর কোনো সুফল টের পেয়েছে— এ তথ্য পাওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক বাজারে দর ওঠানামা করলেও আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দর শুধু বেড়েই গেছে। সাম্প্রতিক কালে কমে যাওয়ার কোনো নজির আছে কিনা জানা নেই।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সবচেয়ে কম লোকসান দিয়েছে ২০০২-০৩ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে ৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভর্তুকি প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারদর ব্যারেলপ্রতি ৪০ মার্কিন ডলারের নিচে থাকে। ভর্তুকির পরিমাণ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৫০ কোটি ছাড়িয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকায় পৌঁছে। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি গড়পড়তা ৯০ থেকে ১২০ ডলারের মধ্যে থাকে। এর পর ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে বাজারদরের পতন শুরু হয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই উভয় বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলারের নিচে চলে আসে। বাংলাদেশে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের চলতি পাম্প মূল্য নির্ধারিত হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। তখন জ্বালানি তেলের বিশ্ব বাজারদর ছিল ১২০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। পরের বছর আগস্টে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৯৮ দশমিক ১৫ মার্কিন ডলার বা ওই সময়কার বিনিময় হারে ৭ হাজার ৬৩১ টাকায় চলে আসে। এ বছর মার্চে ব্যারেলপ্রতি ৪৮ দশমিক ২৪ মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ৭৫১ টাকায় এসে জুনে ২৩ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি পায়। আগস্টে ৩৭ দশমিক ৯১ মার্কিন ডলারে বা ২ হাজার ৯১৩ টাকায় কমে যায়। তবে বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর ভর্তুকি বেড়ে যেতেই থাকে। এ দশকের শুরুতে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রতি টনে ৯ হাজার ৬৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৫০৮ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৫১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৩৯ টাকায় এসেছে।
আমদানিকারক দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমলে রাজস্ব ঘাটতি সংকুচিত হয়। কারণ সরকারের ভর্তুকি বাবদ ব্যয় কমে যায়। দেশের মূল্যস্ফীতি রোধে সহায়ক হয়। পণ্য পরিবহন খরচ কমে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ হয়। বাস ভাড়া কমে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের সুবিধা হয়। অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সাধারণ ভোক্তাদের খরচ করার সামর্থ্য বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয়। ফসলে সেচ বাবদ ব্যয়সংকোচনে কৃষকদের ফসল উৎপাদন খরচ কমে যায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেশের মোট সেচ পাম্পের ৮০ শতাংশের ওপর ডিজেলচালিত। দেশে সেচ করে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। এ কৃষকদের ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেলচালিত সেচ পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করে মোট সেচাধীন আবাদি জমির দুই-তৃতীয়াংশে ফসল উৎপাদন করেন। সাম্প্রতিক কালে সেচ খরচ কমে গেলে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসে ডিজেল ব্যবহার কমে যেতে পারে। এতে হালকা জ্বালানি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ফলে বাতাস দূষণ অপেক্ষাকৃত কম হবে। জ্বালানি তেল বিক্রেতাদের মুনাফা কমে যাবে কিনা জানি না। সবকিছু মিলে দেখা যাক বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য পতনে আমাদের দেশে কে লাভবান হয়— বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, ভোক্তা, ব্যবসায়ী, কৃষক, সাধারণ নাগরিক, নাকি সবাই। লেখক: উন্নয়ন গবেষক